আমাদের চ্যানেলে এক্সক্লুসিভভাবে প্রকাশিত ভাইরাল ভিডিওর জেরে বিধায়ককে শোকজ, ৩ দিনের মধ্যে উত্তর দেওয়ার নির্দেশ
মুর্শিদাবাদ, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫:
আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে নবগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক কানাই চন্দ্র মণ্ডল। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে শোকজ করল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে কানাই মণ্ডলকে তিন দিনের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিতর্কের কারণ: আমাদের চ্যানেলের এক্সক্লুসিভ ভাইরাল ভিডিও
সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের চ্যানেলে প্রকাশিত একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়, যেখানে নবগ্রামের বিধায়ককে দলের জেলা সভাপতিদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যায়। ভিডিওটিতে কানাই মণ্ডলকে বলতে শোনা যায়, “কী দাম আছে প্রেসিডেন্টের? ওরকম প্রেসিডেন্ট মেলা আছে?” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি তৃণমূলের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার প্রেসিডেন্ট খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিরূপ মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ।
এই প্রথম নয়। এর আগে দলীয় নেতাদের নিয়ে প্রকাশ্যে বিরূপ মন্তব্য করেছেন কানাই। তাঁর লাগামছাড়া বক্তব্যের জেরে বারবার দলের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত হচ্ছে।
পুরনো বিতর্কের ঝাঁপি ভরা কানাই
কানাই মণ্ডলের রাজনৈতিক কেরিয়ারে বিতর্ক যেন নিত্যসঙ্গী—
- একবার বলেছিলেন, “তৃণমূল মানেই টাকা তোলার মেশিন”।
- নিজের দলেরই বিধায়ক জাকির হোসেন সম্পর্কে অত্যন্ত কুরুচিকর মন্তব্য।
- ছায়াসঙ্গী গ্রেপ্তারের ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে প্রকাশ্যে গালাগালি করেছিলেন।
- স্ত্রীর নামে সংরক্ষিত আসনে টিকিট কাটলেও বান্ধবীকে নিয়ে ট্রেনে যাত্রা করার সময় যাত্রীদের সঙ্গে হাতাহাতি করেছিলেন।
- নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়িয়েছে এই বিধায়কের।
- সম্প্রতি থানায় ঢুকে ওসি কে পাবলিক দিয়ে মারব বলে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন।
- একবার তো বলেদিলেন ২০২৪ এ লোকসভাতে খলিলুরকে তিনিই জিতিয়েছিলেন।
প্রতিবারই তিনি দলের জন্য অস্বস্তি তৈরি করেছেন এবং সংবাদ শিরোনামে এসেছেন নেতিবাচক কারণে।
বিধায়কের পাল্টা অভিযোগ: ‘এটি চক্রান্ত ও ফেক নিউজ’
শোকজ নোটিশ পাওয়ার পর বিধায়ক কানাই চন্দ্র মণ্ডল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই ঘটনাকে সম্পূর্ণ ‘চক্রান্ত’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটি একটি পুরনো ভিডিও, যা ফেক নিউজ করে কেটে কেটে সংবাদে প্রকাশ করা হচ্ছে। এআই-এর এই যুগে এমন অনেক কিছুই হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন যে, এই চক্রান্তের পেছনে দলেরই কিছু লোক জড়িত রয়েছে এবং তাদের মুখোশ খুব দ্রুতই উন্মোচিত হবে।
বিধায়ক বলেন, এই ফেক নিউজের কারণে তার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির চেয়ে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, যা তার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, তিনি সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ করেছেন এবং সত্যের জয় হবে।
কানাই মণ্ডলের বক্তব্যে অনেকেই আঙুল তুলছেন। প্রশ্ন উঠছে—
- যদি ভিডিও পুরনোও হয়, তবে কেন এমন কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন তিনি?
- কেন বারবারই তিনি দলের বিরুদ্ধে অথবা দলের নেতাদের বিরুদ্ধেই বিতর্কিত মন্তব্য করছেন?
- এআই বা প্রযুক্তির দোহাই দিয়ে তিনি কি নিজের দোষ এড়াতে চাইছেন?
দলের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন: কেন নেওয়া হয়নি ব্যবস্থা?
আশ্চর্যজনকভাবে, কানাই মণ্ডলের বারবার বিতর্কিত মন্তব্য সত্ত্বেও দল এতদিন তার বিরুদ্ধে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি। এর আগে তাকে তৃণমূল ভবনে ডেকে সতর্ক করা হয়েছিল বলে জানা গেছে, কিন্তু সেই সতর্কবার্তা ফলপ্রসূ হয়নি। রাজনৈতিক মহলের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, যখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সংগঠনকে নতুন করে সাজানোর চেষ্টা করছেন, তখন কেন একজন বিধায়ক বারবার শৃঙ্খলাভঙ্গ করছেন এবং দল তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করছে? একজন জননেতার কাছ থেকে বারবার দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য দলকেও প্রশ্নের মুখে ফেলছে এবং ভোটারদের আস্থার জায়গা দুর্বল করছে। কানাই মণ্ডলকে ঘিরে যতবার বিতর্ক তৈরি হয়েছে, ততবারই তাঁর রাজনৈতিক পরিণতি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, দলের এই নীরবতা অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে এক দুর্বল বার্তা দিচ্ছে। করবে। সাধারণ মানুষ এখন প্রশ্ন তুলছে— “যে নেতা প্রকাশ্যে দলকেই কটাক্ষ করেন, তাঁকে এখনও দলে রেখে কেন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে?” এখন দেখার বিষয়, এবারের শোকজের জবাবে বিধায়ক কী বলেন এবং দল তার বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কোনো কঠোর পদক্ষেপ নেয় কিনা।
তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো— দলবলদু (একদা বাম) কানাই মণ্ডলকে আবার বিধানসভায় টিকিট দিয়ে ঝুঁকি নেওয়া, নাকি তাঁকে শৃঙ্খলার নামে কঠোর শাস্তি দেওয়া!