টানা বৃষ্টি ও অমাবস্যার কটালের জোড়া ফলায় বিপর্যস্ত সুন্দরবন, পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুরে ভয়াবহ পরিস্থিতি
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি এবং অমাবস্যার ভরা কটালের জেরে সুন্দরবনের উপকূলবর্তী এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একাধিক মাটির বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নোনা জলে প্লাবিত হয়েছে বিঘের পর বিঘে জমি এবং বহু বাড়িঘর। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুর এলাকা, যেখানে নবনির্মিত রিং বাঁধও জলের তোড়ে ভেসে গেছে।
নিউজ ফ্রন্ট, ২৭ জুলাই ২০২৫: সুন্দরবনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে আবারও চরম ভোগান্তির শিকার হলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। টানা বৃষ্টি এবং অমাবস্যার কটালের সম্মিলিত প্রভাবে এলাকার নদী ও সমুদ্রের জলস্তর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে মাটির বাঁধগুলিতে ব্যাপক ধস নেমেছে এবং বেশ কয়েকটি বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে।
এই বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা ব্লকের গোবর্ধনপুর। সেখানে সদ্য তৈরি হওয়া রিং বাঁধ উপচে নোনা জল ঢুকে পড়েছে গ্রামে। বিঘের পর বিঘে চাষের জমি প্লাবিত হয়েছে এবং ৫০টিরও বেশি বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই রিং বাঁধটি সাময়িকভাবে জল আটকানোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু প্রবল জলোচ্ছ্বাসের কাছে তা টিকতে পারেনি। জলমগ্ন বাড়িঘর ছেড়ে বহু মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন এবং ত্রাণ না পেয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
একইভাবে, রায়দিঘির কঙ্কনদিঘি এলাকার আয়লা বাঁধের পাশে নতুন করে ধস নেমেছে। এই ধসের কারণে নদী সংলগ্ন গ্রামগুলিতে জল ঢোকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা গ্রামবাসীদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, নদীর জলে উপকূলের গ্রামগুলি প্লাবিত হতে পারে, যার ফলে আরও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, প্রতি বছরই বর্ষার সময় এবং ভরা কোটালে এই ধরনের ভাঙন দেখা যায়, কিন্তু প্রশাসন বা সেচ দফতর স্থায়ী কোনো সমাধান সূত্র বের করতে পারছে না। বারবার আবেদন নিবেদন করেও কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি, যার ফলস্বরূপ প্রতি বছরই তাঁদের ভিটেমাটি হারাতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ত্রাণ না পাওয়ায় তাঁদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে।
সুন্দরবনের এই ধারাবাহিক বাঁধ ভাঙন এবং প্লাবনের ঘটনা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো এবং স্থায়ী সমাধানের অভাবকে তুলে ধরছে। এই অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি, নতুবা এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় আরও বড় মানবিক সংকটের জন্ম দিতে পারে।