নিউজ ফ্রন্ট: সদ্য ঘোষিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিটির সম্মান লাভ দেশজুড়ে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ছবির বিষয়বস্তু, তথ্যের সত্যতা এবং জুরির নিরপেক্ষতা—সবকিছু নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে এই বিতর্ক এখন তুঙ্গে।
সমালোচকদের অভিযোগ: ‘প্রোপাগান্ডা’ ছবিকে পুরস্কৃত করা হলো কেন?
‘দ্য কেরালা স্টোরি’ তার মুক্তির পর থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল। নির্মাতারা দাবি করেছিলেন যে এটি কেরালায় হাজার হাজার মহিলার ধর্মান্তর এবং তাদের ইসলামিক স্টেট-এ যোগদানের সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। তবে এই তথ্য এবং সংখ্যার সত্যতা নিয়ে বহু সমালোচক ও রাজনৈতিক দল প্রশ্ন তুলেছিল। তাদের মতে, এটি একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর জন্য বানানো হয়েছে এবং এর মূল উদ্দেশ্য রাজনৈতিক।
এই প্রেক্ষাপটে, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মতো একটি সম্মানজনক পুরস্কার জিতে নেওয়ায় সেই বিতর্ক আরও জোরালো হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, যদি জুরি নিরপেক্ষভাবে ছবিটি বিচার করতেন, তাহলে এর বিষয়বস্তুগত দুর্বলতা এবং অতিরঞ্জিত চিত্রায়ণ তাদের নজরে আসত। তাই এই পুরস্কারের পিছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল কিনা, সেই প্রশ্ন এখন জোরেশোরে উঠছে।
কেরালা মুখ্যমন্ত্রীর কড়া প্রতিবাদ
এই বিতর্কের মধ্যেই কেরালা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, পিনারাই বিজয়ন, পুরস্কারের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “যে ছবিটি কেরালাকে বদনাম করার স্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ায় এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদের বীজ বপন করে, সেই ছবিকে পুরস্কৃত করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি আরএসএস-এর বিভাজনমূলক আদর্শকে বৈধতা দিয়েছে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই সিদ্ধান্ত শুধু মালয়ালিদের নয়, বরং যারা গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করেন, তাদের সবার কাছেই এটি একটি গুরুতর অপমান।
জুরি চেয়ারম্যানের ব্যাখ্যা: ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত’
মুখ্যমন্ত্রীর কড়া মন্তব্যের পর জুরি চেয়ারম্যান তথা বিশিষ্ট পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকর পুরস্কারের পক্ষ সমর্থন করে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, “গল্পের ছলে যেভাবে এক কঠিন বিষয়কে সিনেমায় তুলে ধরা হয়েছে, সেটা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।” গোয়ারিকর স্বীকার করে নেন যে, জুরি বোর্ডের মধ্যেও ছবিটি নিয়ে পুরস্কার দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল, কারণ এর বিষয়বস্তু সংবেদনশীল ছিল। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “সকলের সম্মতিতে ঐকমত্যের ভিত্তিতেই ‘দ্য কেরালা স্টোরি’কে জাতীয় পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।”
এই দুই পরস্পর বিরোধী বক্তব্যের পর, বিতর্ক এখন আর শুধু ছবির বিষয়বস্তুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং জাতীয় পুরস্কারের মতো একটি সম্মানজনক প্ল্যাটফর্মের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক এবং সামাজিক মহলে এই বিতর্ক আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।