নিউজ ফ্রন্ট, বহরমপুর, ২৫ সেপ্টেম্বর:
বৃহস্পতিবার বহরমপুর রবীন্দ্র সদনে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করল বাল্যবিবাহ মুক্তির রোডম্যাপ। উপচে পড়া দর্শকাসন যেন স্পষ্ট ইঙ্গিত দিল—সামাজিক এই লড়াইয়ের পক্ষে জনসমর্থন যথেষ্ট ইতিবাচক।
জেলা শাসক রাজর্ষি মিত্র এদিন ঘোষণা করেন, আসন্ন ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই বহরমপুর ও হরিহরপাড়া ব্লককে বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষণা করা হবে। ইতিমধ্যেই জেলার চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। এদিন ভাকুড়ি-২, নিয়ালিশপাড়া-গোয়ালজান এবং মদনপুর মিলে আরও তিনটি পঞ্চায়েতকে সেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

প্রশাসনের উদ্যোগকে আরও মজবুত করতে এগিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক সংস্থা ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট (BAT)। সংস্থার সহযোগিতায় জেলার ২৬টি ব্লকে শিশু সুরক্ষা প্রকল্প “কবজ” চালু হবে। বাস্তবায়নে থাকছে দুটি এনজিও—সুপ্রভা পঞ্চশীলা মহিলা উদ্যোগ সমিতি এবং সিনি।
এই দিন বাল্যবিবাহ রোধে বিশেষ ভূমিকার জন্য সম্মানিত করা হয় কন্যাশ্রী যোদ্ধা সুমাইয়া খাতুন, আখি বিশ্বাস, শংকরী কিসকু-কে। পাশাপাশি চাইল্ড ম্যারেজ সুপারভাইজর তামান্না ফারহানা, পূজা মল্লিক, পায়েল হাজরা, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. দেবাশিষ সাহা, চেম্বার অফ কমার্সের স্বপন ভট্টাচার্য্য, সাংবাদিক কল্যাণচন্দ্র (সংবাদ প্রতিদিন) ও অভিষেক পাল (বর্তমান)-কেও।
সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা বলেন,
“যে পরিবারে মেয়েদের সাহস দিয়ে বড় করা হয়, সেই পরিবারের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হয়। আমার বাবার কাছ থেকেই আমি শিখেছি—মেয়েরাও ছেলের মতো সমান সক্ষম।”
অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) চিরন্তন প্রামাণিক মন্তব্য করেন,
“এই লড়াই শুধুই ব্যক্তিগত নয়, এটি সামাজিক। শিক্ষক, অভিভাবক, প্রশাসন, পুলিশ—সবাইকে একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।”
অন্যদিকে অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারন) দিননারায়ণ ঘোষ বলেন,
“আজকের লড়াই আর ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে নয়, বরং সামাজিক অসুখের বিরুদ্ধে। বাল্যবিবাহ সেই অসুখেরই বড় লক্ষণ।”
জেলা শাসক রাজর্ষি মিত্র এক ধাপ এগিয়ে বলেন,
“৫০ শতাংশ জনসংখ্যা যদি মহিলারা হন, তাহলে তাঁদের অধিকার খর্ব করে কোনও সমাজ এগোতে পারে না। বাল্যবিবাহ আসলে নারীর অধিকার হরণেরই নামান্তর। তাই এই লড়াই নারী-পুরুষ সবার।”

অনুষ্ঠান শেষে নিউজ ফ্রন্ট-এর সঙ্গে কথা বলার সময় চিরন্তন প্রামাণিক আশ্বাস দেন,
“আমাদের লক্ষ্য ডিসেম্বরের মধ্যেই বহরমপুর ও হরিহরপাড়াকে সম্পূর্ণ বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করা। এই লড়াইয়ে প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি স্তরের সহযোগিতা প্রয়োজন।”
যদিও কিছু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তবুও সামগ্রিকভাবে মুর্শিদাবাদের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল। জেলার মানুষও এখন অপেক্ষা করছে—ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়িত হয়ে মুর্শিদাবাদ কবে আনুষ্ঠানিকভাবে বাল্যবিবাহমুক্ত জেলা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
