নিউজ ফ্রন্ট, কলকাতা, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫:
রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জন্য বড় আইনি স্বস্তি। নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত প্রায় সবক’টি মামলায় আগেই জামিন পেয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার প্রাথমিক নিয়োগ মামলাতেও শর্তসাপেক্ষে জামিন মঞ্জুর করল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের সিঙ্গল বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছে। ফলে নিয়োগ দুর্নীতির সব ক’টি মামলাতেই আপাতত জামিন পেলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। তবে এখনই তিনি জেল থেকে বেরোতে পারছেন না।
আদালতের নির্দেশ ও শর্ত
আদালত জানিয়েছে—
১. পার্থ আদালতের অনুমতি ছাড়া জেলার বাইরে যেতে পারবেন না।
২. কোনও সরকারি পদে থাকতে পারবেন না।
৩. সাক্ষীদের প্রভাবিত করা যাবে না।
৪. পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে।
৫. তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে।
তবে তিনি বিধায়ক হিসাবে নিজের সাংবিধানিক কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন।
কেন এখনই জেল থেকে মুক্তি নয়?
আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশই পার্থর জেল থেকে বেরোনোর পথে প্রধান অন্তরায়। গত ১৮ আগস্ট শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, জামিনের বন্ড গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতকে চার সপ্তাহের মধ্যে চার্জ গঠন করতে হবে এবং দু’ মাসের মধ্যে সাক্ষীদের বয়ান নথিবদ্ধ করতে হবে। তার আগে জেলমুক্তি সম্ভব নয়। ফলে, পুজোর আগে পার্থের বাড়ি ফেরা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগামী এক মাসের মধ্যেই তাঁর জেল থেকে মুক্তির সম্ভাবনা প্রবল বলে আইনি মহলের অভিমত।
নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেপ্তার ও অর্থ জব্দ
২০২২ সালের ২২ জুলাই নাকতলায় পার্থর বাড়ি এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জ ও বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকার নগদ উদ্ধার করে ইডি। সোনা-দানা ও অন্যান্য সম্পত্তি মিলিয়ে বাজেয়াপ্ত হয়েছিল প্রায় ৬০ কোটি টাকার সম্পদ। এরপর একের পর এক নিয়োগ দুর্নীতির মামলা— নবম-দশম থেকে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি ও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় নাম জড়ায় পার্থর। ইডি ও সিবিআই তাঁকে গ্রেপ্তার করে এবং একাধিক চার্জশিট দাখিল করে।
তিন বছরেরও বেশি সময় জেলে
গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে বন্দি। একাধিকবার জামিনের আবেদন করেছিলেন তিনি, শারীরিক অসুস্থতার কারণও দেখিয়েছিলেন। অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই জামিন পেয়েছেন। অনেক অভিযুক্তও জামিনে মুক্ত। এদিন প্রাথমিক নিয়োগ মামলাতেও জামিন মঞ্জুর হওয়ায় বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, পার্থর জেল থেকে মুক্তি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
রাজনৈতিক ও আইনি মহলে প্রশ্ন
যদিও একাধিক মামলায় জামিন পাওয়া নিয়ে সিবিআই ও ইডির তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তিন বছরের বেশি সময় পেলেও কেন এখনও সব কেসে চার্জশিট এবং প্রমাণ আদালতে পেশ করতে ব্যর্থ হলো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা, তা নিয়েও বিতর্ক চলছে।