নাগরকাটা, ৬ অক্টোবর, ২০২৫:
উত্তরবঙ্গের নাগরকাটায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে ত্রাণ বিতরণে গিয়ে হামলার শিকার হন বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। ঘটনাটি ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে সমগ্র জলপাইগুড়ি জেলায়। আহত দুই বিজেপি নেতাকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে।
কীভাবে ঘটল হামলা
সূত্রের খবর, সোমবার দুপুরে খগেন মুর্মু এবং শঙ্কর ঘোষ নাগরকাটা ব্লকের বানারহাট এবং বেলাকোবা এলাকা পরিদর্শনে যান, যেখানে বন্যার জেরে শত শত পরিবার ঘরছাড়া হয়েছে। ত্রাণ বিতরণের সময় একদল স্থানীয় দুষ্কৃতী হঠাৎ করে তাঁদের উপর পাথর ও লাঠি নিয়ে হামলা চালায়।
বিজেপির দাবি, আক্রমণকারীরা “শাসক দলের ঘনিষ্ঠ”। ঘটনাস্থলে উপস্থিত দলীয় কর্মীরা জানিয়েছেন, সাংসদ খগেন মুর্মুর মাথায় গুরুতর আঘাত লেগেছে, আর বিধায়ক শঙ্কর ঘোষের মুখে ও বাম কাঁধে আঘাত লাগে। তাঁদের গাড়ির কাচ ভেঙে যায় এবং কনভয় ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে।

ঘটনার পরপরই বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং এলাকায় ধারাবাহিক টহলদারি শুরু হয়।
নাগরকাটা থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে, তবে রাত পর্যন্ত কোনও গ্রেপ্তারের খবর মেলেনি। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, “ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে। কারা এই হামলার সঙ্গে যুক্ত, তা শীঘ্রই প্রকাশ পাবে।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন —
“যেভাবে আমাদের সাংসদ ও বিধায়কের উপর প্রকাশ্যে হামলা চালানো হয়েছে, তা প্রমাণ করে পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র মৃতপ্রায়। তৃণমূল কংগ্রেস এখন ত্রাণকার্যেও রাজনীতি করছে। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ফ্রন্ট হিসেবে ব্যবহার করে বিজেপি নেতৃত্বের উপর হামলা চালানো হয়েছে।”
তিনি আরও দাবি করেন,
“এই হামলা পরিকল্পিতভাবে সংগঠিত, এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা জানতেন। উত্তরবঙ্গের মানুষ তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ, তাই তারা ভয় দেখানোর রাজনীতি শুরু করেছে।”
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ, বিজেপি নেতারা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই দুর্গত এলাকায় প্রবেশ করেন, এবং স্থানীয়দের উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তৃণমূল নেতা বলেন,
“ত্রাণ বিতরণের নামে বিজেপি এলাকায় রাজনৈতিক শোডাউন করতে গিয়েছিল। জনতা ক্ষোভে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, কিন্তু আমরা কখনও সহিংসতাকে সমর্থন করি না।”
গত কয়েকদিনের অবিরাম ভারী বৃষ্টিতে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলাজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
- একাধিক সেতু ভেঙে পড়েছে,
- হাজারো মানুষ গৃহহীন,
- এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায় ৪০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে।
এই প্রেক্ষিতেই বিজেপি নেতৃত্ব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন।