আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনা: পাইলটদের দোষারোপ ‘দুর্ভাগ্যজনক’, নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের

নয়াদিল্লি, ২২ সেপ্টেম্বর: আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় পাইলটদের দোষারোপ করাকে “দুর্ভাগ্যজনক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলে মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলার পর্যবেক্ষণে, শীর্ষ আদালত কেন্দ্রীয় সরকার এবং ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (DGCA)-কে একটি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি এন কে সিং-এর বেঞ্চে মামলার শুনানিতে শীর্ষ আদালত জানায় যে, প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে পাইলটদের দোষ দেওয়া একেবারেই অনুচিত। আদালত প্রশ্ন তোলে, “যদি আগামীকাল কেউ বলে যে পাইলট এ বা বি-র দোষে দুর্ঘটনা হয়েছে, তাহলে তার পরিবার ভুগবে… যদি পরে চূড়ান্ত রিপোর্টে পাওয়া যায় যে কারোর দোষ নেই? দুর্ভাগ্যজনকভাবে যখন এই ধরনের বিপর্যয় হয়, তখন প্রতিপক্ষ বিমান কোম্পানি সুবিধা পায়।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে আদালত পাইলটদের সম্মান এবং তাদের পরিবারের প্রতি সংবেদনশীলতা দেখিয়েছে।

গত ১২ জুন দুপুরে আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করার কয়েক মিনিটের মধ্যেই এয়ার ইন্ডিয়ার ১৭১ নম্বর বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় বিমানের ১২ জন ক্রু, ২২৯ জন যাত্রী এবং মাটিতে থাকা ১৯ জন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীসহ মোট ২৬৫ জনের মৃত্যু হয়। একমাত্র বেঁচে যান এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক।

দুর্ঘটনার পর পরই এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB) একটি প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশ করে। ওই রিপোর্টে বলা হয় যে, বিমানটি রানওয়ে ছাড়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই দুটি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়, কারণ জ্বালানির সুইচ ‘রান’ থেকে ‘কাটঅফ’ মোডে চলে গিয়েছিল। যদিও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার থেকে প্রাপ্ত কথোপকথনে একজন পাইলটকে অন্যজনকে জিজ্ঞাসা করতে শোনা যায়, “তুমি ফুয়েল কাট কেন করলে?” এবং তার উত্তরে অপর পাইলট বলেন, “আমি করিনি”। এই তথ্য থেকেই প্রথমে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, পাইলটের ভুল অপারেশনের কারণেই দুর্ঘটনা। কিন্তু ককপিট ভয়েস রেকর্ডার থেকে প্রকাশিত পাইলটদের শেষ কথোপকথন দেখায়, তারা বিভ্রান্ত হলেও ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও ভুল করেননি।

প্রথমে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, বিমানটি পাখির সঙ্গে সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে সিসিটিভি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভিডিওতে পাখির কোনও উপস্থিতি ধরা পড়েনি। আবার একই সঙ্গে দুটি ইঞ্জিন বিকল হওয়াও বিমান চলাচলের ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল।

একমাত্র জীবিত প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্বাস কুমার রমেশও বলেন,
“হঠাৎ সবুজ আলো জ্বলে ওঠে, তার সঙ্গে প্রবল শব্দ হয়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানটি কেঁপে ওঠে।”

বিশেষজ্ঞদের অনুমান, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার কনসোলের কাছে থাকা বায়ু টারবাইন কাজ করা বন্ধ করে দেয়, যা ইঞ্জিন বিকলের অন্যতম কারণ হতে পারে।

এই রিপোর্ট নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায়, সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকার এবং ডিজিসিএ-এর কাছে সম্পূর্ণ রিপোর্ট চেয়েছে এবং একটি স্বাধীন তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। আদালত মনে করে, বিমানের জ্বালানি সুইচের স্থান পরিবর্তনের মতো একটি ছোট ভুলও বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এই ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের অন্যতম বৃহৎ বিমান-দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *