নিউজ ফ্রন্ট, বহরমপুরঃ এবার বাপ তুলে গালাগাল করে শিরোনামে নবগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক কানাই চন্দ্র মন্ডল। এর পূর্বে নিজের দলকে উদ্দেশ্য করেই বলেছিলেন, “তৃণমূল মানেই টাকা তোলার মেশিন”। শুধু তাই নয়, স্ত্রীর নামে সংরক্ষিত আসনে কাটা টিকিটে বান্ধবীকে নিয়ে ট্রেনে যাত্রা করা কালীন যাত্রীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে ভাইরাল হয়েছিলেন।
এবার নিউজ ফ্রন্টের হাতে যে ভিডিয়ো ফুটেজ এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে মাননীয় বিধায়ককে বলতে শোনা গেল তিনি কাউকে কাউকে উদ্দেশ্য করে ‘অমুকের( উচ্চারিত শব্দ প্রকাশ অমার্জিত বলেই অমুক বলেই উল্লেখ করা হল) বাচ্চা’ বলে উল্লেখ করছেন। প্রসঙ্গক্রমে এক বহুল প্রচারিত দৈনিক সংবাদপত্রের নামও তিনি উল্লেখ করেন।সেই ফুটেজে তিনি দাবি করেন সাংসদ খলিলুর রহমানকে জেতাতে মূখ্য ভূমিকা নাকি তিনিই নিয়ে নিয়েছিলেন। সমাজ সেবার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে নিজেকে ‘মসিহা’ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার বাসনাও দেখা গেল সেই ভিডিয়ো ক্লিপসে।

ঘটনার সূত্রপাত, সাম্প্রতিক কালে গোলাম কবির ওরফে রাজু সেখ নামে এক ব্যক্তিকে নবগ্রাম থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। রাজুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, জমি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। বহুদিন কেটে গেলেও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা না হওয়ায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী পুলিশের দ্বারস্থ হন। পুলিশ রাজুকে তার নিমগ্রামের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে। শুক্রবার তাকে আদালতে পেশ করে পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানানো হলেও আদালত সেই আবেদন খারিজ করে জামিন মঞ্জুর করে। এই রাজু বিধায়কের ঘনিষ্ঠ বলে স্থানীয় ভাবে প্রচারিত। তার জামিন মঞ্জুর হতেই ফোঁস করে ওঠেন কানাই চন্দ্র মন্ডল। ফুটেজ দেখে বোঝা যাচ্ছে, বিধায়কের এই মন্তব্য ‘বেফাঁস’ নয় তিনি ভেবে চিন্তেই চোখা-চোখা শব্দ প্রয়োগ করেছেন। শুধু তাই নয় আদালতের সিদ্ধান্তকে ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’ বলে উল্লেখ করেছেন। ফুটেজে স্থানীয় ওসির বিরুদ্ধেও মন্তব্য করতে দেখা গেছে তাঁকে।
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, বিধায়কের এ দিনের বাক্য বানের টার্গেট ছিল তাঁর নিজের দলের একাংশের পাশাপাশি সাংবাদিক, বিরোধী দলের উদ্দেশ্যেও।
একজন জনপ্রতিনিধির এমন আচরণে ক্ষোভ ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও এই ঘটনায় খবর লেখার সময় পর্যন্ত তৃণমূলের নেতৃত্বের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবগ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এই ব্যক্তি আমাদের বিধায়ক ভাবতেও লজ্জা লাগছে। অবশ্য তৃণমূলে এখন কে কত অশ্লীল হতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে। অনুব্রত থেকে কানাই মন্ডল তার দৃষ্টান্ত।
স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মী বলেন, আসলে সিপিএম থেকে আসা ক্ষমতালোভী এইসব নেতারা নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়গান করলেও আসলে দলকে নানাভাবে হেয় করে এলাকায় নিজের আধিপত্য কায়েম রাখার চেষ্টা করেন। উল্লেখ্য, বিরোধী দল নেতা শুভেন্দু অধিকারী এই কানাইয়ের বিরুদ্ধে ঘুষ নিয়ে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন। কীর্তিমান এই বিধায়কের বিরুদ্ধে দল এখন কী ব্যবস্থা নেয় সেটাই দেখার।